অন্যান্য বিভাগ


যে তামাশায় নিভে যায় ঈমানের প্রদীপ 

-তামীম রায়হান



আমাদের সমাজে কত রকম মানুষ, কত রকম মুসলমান। কেউ নামায পড়ে, কেউ পড়েনা, কেউ ভাল কাজ করে, কেউ খারাপে লিপ্ত থাকে। এতসব সমূহ কাজের মধ্যে যে কাজটি আজকাল অহরহ চোখে পড়ে, তা হচ্ছে ইসলাম বা মুসলমানদের কোন বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা। বন্ধুদের আড্ডায় আপনিও হয়তো শুনেছেন, ঐ দেখ, হুজুরের কি সুন্দর ছাগলা দাড়ি!! সবার সাথে আপনিও হয়তো হেসে ফেললেন হো হো করে। আমাদের কিছু প্রবাদ বাক্যও এমন রয়েছে যাতে সুস্পষ্টভাবে ইসলাম নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়েছে। কথা কথায় কারো অক্ষমতা বুঝাতে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত কথাটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। কখনো ভেবে দেখেছেন, এ কথায় কাকে ঠাট্টা করা হল- আল্লাহর ঘর মসজিদ নাকি মোল্লা মৌলভী

নবীযুগের ইসলামী শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদবী খলীফা আজ দর্জির উপনাম। অত্যন্ত সম্মানিত ২য় পদবী কাজী আজ হয়েছে বিয়ে পড়ানো মুন্সীর উপাধি। আহা! কোটি মুসলমানদের দেশে কী সূক্ষভাবে অপমানিত হচ্ছে এককালের শক্তিধর দুটো উপাধী। আমাদের নাটক সিনোমাগুলোতেও কখনো কখনো ইমাম বা হুজুর চরিত্র রূপায়ন করানো হয় কোনো একটি খারাপ বা ঘৃণিত বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে, সুকৌশলে দর্শকদেরকে যা জন্ম দেয় বিরূপ ধারণা। ছলে বলে বিভিন্ন কার্টুনেও হেয় করা হয় বোরকাবৃত নারীকে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কোন বিষয় নিয়ে আকারে ইঙ্গিতে তাচ্ছিল্য আজ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় যেন।
প্রিয় পাঠক, আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তিনি যেগুলোর কারণে বান্দার সব আমল বাতিল করে দেন, এসবের অন্যতম হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম সর্ম্পকিত কোন বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা। শুধু কি আমল বাতিল হয়ে যাওয়া, বরং কোন কোন কথা ও ঠাট্টা তো আপনাকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে আপনার অজান্তে।
এজন্যই আলেমরা বলেন, নামাজ না পড়া কুফুরী নয়, কিন্তু নামাজ বা নামাজীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কিংবা তামাশা করা কুফুরী। মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদেরকে নিয়ে হাসি তামাশা করতো, তাদেরকে বোকা ভাবতো। আল্লাহ পাক তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেছেন, তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না। (সূরা বাকারা-১৩) 
ইমাম ইবনে কুদামাহ লিখেছেন, যে আল্লাহকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি দিল, কিংবা যে আল্লাহ বা তার রাসূল কিংবা দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করল, সে কাফের হয়ে গেল। (আল মুগনী)
ইমাম নববী বলেন, স্বেচ্ছায় কিংবা কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোন কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসূলের কোন বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরী।
ইমাম কুরতুবী লিখেছেন, মজা করার জন্য হোক বা সত্যি সত্যি হোক, ইসলামের কোন সাধারণ বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা কুফুরী। এতে কারো দ্বিমত নেই।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, দ্বীনের যে কোন স্পষ্ট বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরী। যে এমন করল তার ঈমান ধ্বংস হয়ে কুফুরীতে পরিণত হল।
আর তাই কোন একজন সাধারণ মানুষ, যে দাঁড়ি রেখে দ্বীনের উপর চলতে সচেষ্ট, যে নারী বোরকায় নিজেকে আবৃত রেখে চলতে চান, তাকে যদি এ কারণে কেউ তুচ্ছ ভাবে কিংবা অন্যদৃষ্টিতে দেখে, তবে নিশ্চয়ই বিষয়টি গিয়ে দ্বীনের সীমারেখা পর্যন্ত পৌঁছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়। অনেক নামাযী মানুষ কিংবা দাড়িওয়ালা সাধু হয়তো অপকর্মে লিপ্ত, তাই বলে তো আর তার ধর্মকে গালমন্দ করা বৈধ হয়ে যায় না, এটি তার স্বভাবের দোষ, তার নামায কিংবা আমলের এতে কী
অহরহ পথে ঘাটে এসব বিষয় নিয়ে মশকরা মানুষ নিজের অজান্তেই তার দ্বীন থেকে বহি®কৃত হয়ে যায়, সামান্য বিদ্রুপে শেষ হয়ে যায় তার এতদিনের সব নেক আমল। আজকাল হরহামেশা অনেক লেখক সাহিত্যিক ইসলাম নিয়ে তির্যক লেখা লিখেন, না জেনে না বুঝে এ বিষয়ে পান্ডিত্য দেখাতে গিয়ে ডুবে যান কুফুরীর অতল সাগরে। মুসলমানী নামটুকু ছাড়া তার আর কিছুই বাকী থাকেনা।
আল্লাহ পাক এমন লোকদেরকে বলছেন, আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে, আমরা একটু হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ? তোমরা কারণ দেখিয়ো না, তোমরা তো তোমাদের ঈমানের পরও কুফুরী করে ফেলেছো। (সূরা তওবা-৬৫-৬৬)
পবিত্র কুরআনে অভিশপ্ত জাতিদের যেসব ঘটনা বিবৃত রয়েছে, তারা তাদের নবীকে নিয়ে এভাবে ব্যঙ্গ করতো, নবীর অনুসারীদের নিয়ে পথে ঘাটে বিদ্রুপ করতো, আল্লাহ পাক তাদেরকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন, পরকালেও তাদেরকে এর বদলা দিবেন। মদীনার মুনাফিকদের অবস্থাও ছিল এরকম। হাদীসের কিতাবসমূহে এর বিবরণ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।
খুব সংক্ষেপে কিছুটা হলেও আপনি হয়তো এর ভয়াবহতা অনুমান করতে পেরেছেন। আর তাই আজ থেকে সব বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা নয়, ইসলাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয়, সামান্য একটু হাসির জন্য নিজের সব ঈমান আমল বিকিয়ে দেওয়া কোন সচেতন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। 
আসুন, নিজেরাও বেঁচে থাকি, অন্যকেও বাঁচিয়ে রাখি।