অন্যান্য বিভাগ

আমার আমি




নাম তামীম রায়হান। 
১৯৮৮ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকার মৌচাক-মালিবাগে সায়ান ক্লিনিকে আমার জন্ম। বাবা একজন চিকিৎসক ও পরহেযগার মানুষ। নাম ডা. গোলাম হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্য বিভাগে একসময়ের মেধাবী ছাত্রী আমিনা আফরোজ আমার জন্মদাতা জননী। সুশিক্ষিত হয়েও মা পুরোদস্তুর গৃহিণী এবং পূর্ণ সমর্পিত ধর্মানুরাগী। পরিবারের চার ভাই এবং এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আমি।
জন্মের মাস কয়েক পর বাবার চাকরির সুবাদে আমার প্রথম গন্তব্যস্থল হয়েছিল ইরান। একাধারে পাঁচ বছর ইরানে থাকাবস্থায় মা-বাবার কাছেই প্রাথমিক শিক্ষার শুরু। তারপর দেশে ফিরে চাঁদপুর শহরের আল-আমিন একাডেমীতে ৩য় শ্রেণীতে ভর্তির মাধ্যমে একাডেমিক পড়াশোনার যাত্রা। 
তৃতীয় শ্রেণী পাশ করে স্কুলের পড়াশোনা আপাতত শেষ। সাত বছর বয়সে মাদরাসায় ভর্তি। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মুমিনপুর মাদরাসায় আলিফ-বা-তা থেকে আরবী মাধ্যমে পড়ালেখা শুরু। দশ বছর বয়সে পবিত্র কুরআনুল কারীমের হিফজ সম্পন্ন করে এগার বছর বয়স থেকে উর্দু-ফার্সী-আরবী ভাষায় পড়ালেখা শুরু।

তারপর পনের বছর বয়সে বাবার নতুন চাকরির সুযোগে সৌদী আরব যাওয়া। প্রায় দেড় বছর সেখানে থাকাকালে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং দেশে ফিরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। সময়ের খাতায় তখন ২০০৩ সাল। তারপর ঢাকার সূত্রাপুরে অবস্থিত ফরিদাবাদ মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক কওমী মাদরাসার পড়াশোনা এবং এক বছর পিছিয়ে ২০০৬ সালে এইচএসসি সমমান আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। তারপর ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় কওমী ধারার পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করার গৌরব অর্জন। ২০০৮ সালে কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত এবং বোর্ড পরীক্ষায় ফার্স্টক্লাস ফলাফল। এর পরের বছর ২০০৯ সালে লালবাগ মাদরাসার দারুল ইফতায় ফতওয়া প্রদান বিষয়ক সংক্ষিপ্ত কোর্স সম্পন্ন।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপ পেয়ে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনায় নিমগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যের আরবী ও ইংরেজী মাধ্যমে পরিচালিত কাতার ইউনিভার্সিটিতে আমার অধ্যয়নের বিষয়- দাওয়াত এবং গণমাধ্যম।

ছোটকাল থেকেই কাগজ-কলমের সাথে বন্ধুত্ব শুরু। ১৯৯৮ সালে প্রথম ছড়া ও গল্প ছাপা হয়েছিল একটি ইসলামী মাসিক ম্যাগাজিনে। ২০০৫ সালে নিজের উদ্যোগে কিশোর কানন নামের একটি অনিয়মিত নিউজলেটার এর প্রকাশনা শুরু। তারপর লালবাগ মাদরাসায় ছাত্রাবস্থায় নতুন মাসিক পত্রিকার স্বপ্ন দেখা এবং নবযুগ নাম দিয়ে কিশোর ও তরুণদের জন্য ম্যাগাজিন শুরু হল। কিছুদিন পর নাম পরিবর্তন করে নবধ্বনি নামে নিয়মিত মাসিক ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশনায় লেগে গেলাম। ২০০৭ থেকে আজ অবধি জড়িয়ে আছি নবধ্বনির সম্পাদনা এবং প্রকাশনায়।

এর ফাঁকে ফাঁকে মাসিক তরজুমানে ইসলাম নামে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক এবং এরও পরে নয়াজাহান নামের আরেকটি ম্যাগাজিনে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন কাজের সুযোগ হয়েছিল।

দারুল বালাগ নামের একটি প্রকাশনী সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক হিসেবে বই-পুস্তক সম্পাদনা এবং প্রকাশনার অভিজ্ঞতাও হয়েছে কিছুদিন। ২০১১ সাল থেকে অনলাইন ম্যাগাজিন গুঞ্জন ডটকম এর সম্পাদনায় জড়িত। সম্প্রতি নবপ্রকাশ নামে ঢাকায় নতুন প্রকাশনী সংস্থার পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছি।

বর্তমান দিনগুলোতে শুধুই পড়াশোনা এবং লেখালেখি। অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম এর কাতার সংবাদদাতা এবং ইসলাম পাতার নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে এক বছর ধরে দায়িত্বপালন। পাশাপাশি নানা জাতীয় দৈনিক, মাসিক, অনলাইন ম্যাগাজিন এবং ব্লগে আমার লেখা রচনা ও নিবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। আমার অনুদিত ও সংকলিত কিছু বই খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে।

ইতিহাস আমার ব্যক্তিগত পড়াশোনার প্রথম পছন্দ। শখের তালিকায় যোগ হতে পারে ভ্রমণ, বই পড়া এবং প্রাণখোলা আড্ডা দেওয়া। অপছন্দনীয় বিষয়ের শীর্ষে খেলাধুলা এবং অবসর সময় কাটানো।

এখন পর্যন্ত অবিবাহিত আমি আমার ভবিষ্যত সম্পর্কে মোটেও কৌতুহলী কিংবা উদ্বিগ্ন অথবা হতাশ নই। পরম দয়াময়ের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে বেঁচে থাকাই আমার জন্য আনন্দের। মা-বাবার দুআ আমার মতো অভাজনের প্রথম এবং সর্বশেষ সম্বল। ভাইবোন এবং বন্ধুদের মমতার সাগরে ভেসে হাসি-কান্নায় কেটে যাক ছোট্ট এ জীবনের মুহুর্তগুলো- এর চেয়ে বেশি আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার।